ব্যাংকের জন্য কি কি বই পড়বেন bcs bank preparation
ব্যাংকের জন্য কি কি বই পড়বেন
মো: মহসিন। (সনাতন দা) শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৭ ক্যারিয়ার
ব্যাংকের জন্য কি কি বই পড়বেন
ব্যাংকের জন্য কি কি বই পড়বেন
সেদিন বোসবাবুর সাথে এক বিড়ির(পোষাকি নাম ‘সিগারেট’) দোকানে দেখা। বোসবাবুকে চিনেছেন তো!২৪৪১১৩৯ নাম্বারের ল্যান্ডফোনটির মালিক। অঞ্জন দত্তের হলেও হতে পারে শ্বশুর। কুশল বিনিময়ের পর জিজ্ঞেস করলাম,
‘তা, কাকাবাবু বেলাদির খবর কী?’
‘আর বোলো না সনাতন, এই অঞ্জন না কি যেন নাম- একটা বিশুদ্ধ ভ্যাগাবন্ড। ছেলেটার অত্যাচারে মেয়েটাতো অতিষ্ঠ হয়ে গেল।’
‘অঞ্জন দা-কে তো ভাল বলেই জানতাম। তা এমন করছে কেন? কিছু বলেছে?’
‘এই যে বিভিন্ন ব্যাংকে ১৬৬৩ জন সিনিয়র অফিসার নিয়োগের সমন্বিত এক বিশাল সার্কুলার দেখে ছোকরার মাথাটা বিগড়ে গেছে।আমি তো ওদের প্রেম- পবিত্র হোক আর অপবিত্রই হোক, মেনে নিয়েছিলাম।’
‘কী করেছে- একটু খুলে বলেন তো কাকাবাবু!’
‘কী আর বলবো, বাবা হয়ে মেয়ের প্রেমপত্র পকেটে করে নিয়ে যাচ্ছি। ল্যান্ডফোনটা নষ্ট থাকায়, পত্রবাহকের কাজ করছি। অবশ্য একটু পড়ে ফেলেছি। লোভ সামলাতে পারিনি। কেউ তো দেখছে না। তুমিও পড়তে পার। ওইসব, মানে... বোঝ না, ওইসব কিছু লেখা নাই। বাজারের ফর্দের মত কী সব লেখা!’
‘দেখি তো!’
খুলে দেখি, লেখা আছে-
‘প্রিয় বেলা,
তোমার ওই সোনালী দিগন্তের মত উজ্জ্বল নাম থেকে ‘বোস’পদবিটাকে ছেটে ফেলে ‘দত্ত’ বসাতে চাই। এর জন্য প্রয়োজন একটা চাকরি।বাপের পকেট আর কত ফাঁকা করব! সদ্য প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিটা তো দেখেছ। চল, দুজনে মিলে কষে একটা প্রিপারেশন নেই। সনাতনকে তো চেনো। ব্যাংকে কামলা খাটে। একটা ‘বাজে’ পরামর্শ দিয়েছে প্রিপারেশন নিয়ে। লিখেছে-
এই নিয়োগে যার চাকরি হবে না- তার মত দুর্ভাগা, ইঁদুর কপালে আর দু’টি নেই। প্রমিথিউস বাউন্ড-ই থেকে যাবে; আন-বাউন্ড হবে না।একটু কষ্ট করলেই আপনাদের কসবা’র ঠিকানায় একটা Appointment Letter যেতেই পারে।
তবে, তার জন্য দরকার একটা ‘ক্ষ্যাপা দুর্বাষা’ প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতিতে যা দরকার-
##ঢাল-তলোয়ার
১. ব্যাংকের বিগত ৩/৪ বছরের সকল প্রশ্নসহ সমাধান;
২. Effective Writing Skills for Advanced Learners(S. M. Zakir Hossain);
৩. The Anatomy of English Sentence(S. M. Zakir Hossain);
৪. Common Mistake by TJ Fitikids (বাংলা ভার্সন);
৫. Mentor's Guide;
৬. নিয়মিত কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স;
৭. The Pearson Guide to Bank Probationary Officer Recruitment Examinations (Vandana Thorpe);
৮. Bank Written Math(Jafar Iqbal Ansary);
৯. শীকর(মোহসীনা নাজিলা);
১০. Dot com(www.mcqtest.com, www.indiabix.com ইত্যাদি থেকে Md. Mohshin কর্তৃক সংকলিত) ও
১১. অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৭।
##প্লান অব অ্যাকশান
#ক. প্রিলি
১। নিজের পড়ার সুবিধার্থে সহজে পরিবর্তনযোগ্য একটা খসড়া রুটিন তৈরি করে ফেলুন। ছোট ছোট টার্গেটে এগিয়ে যান।
২। ব্যাংকের বিগত ৩/৪ বছরের প্রশ্ন সম্ভার থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১টা সম্পূর্ণ প্রশ্ন হাতে-কলমে সলভ করুন। দেখে দেখে পড়ে যাওয়া আর মনে মনে সন্দেশ খাওয়া- পারিই তো, বাদ দিয়ে দিন। তা না হলে মনের কথা মনেই থেকে যাবে, খাতায় আর উঠবে না। প্রশ্নকর্তাকে গালি দিবেন।
৩। যেগুলো পারেন নাই- তাদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিন। উহারা বেঈমানের বংশ। আপনাকে মাইনকা চিপায় ঠেসে ধরবে।
৪। যত ছোট অংকই হোক, খাতায় ঠেসে ধরুন। ক্যালকুলেটরের ব্যাটারি খুলে ফেলে দিয়ে Step by step করে যান। বুঝে ফেললে Shortcut ধরুন। আগেই Shortcut ধরলে রিটেন ম্যাথে ধরা খাবেন।
৫। The Anatomy of English Sentence বইটাকে Sentence Correction, Identification of Parts of Speech এর বাইবেল বলা যায়। বাক্যের অর্থ আপনি বোঝেন আর না বোঝেন, কোন সমস্যা নয়। ভুলগুলো মেঘমুক্ত আকাশে নক্ষত্রের মত জ্বলজ্বল করবে। আপনি শুধু বড়শিটা টেনে তুলবেন।
৬। Common Mistake by TJ Fitikids (বাংলা ভার্সন) বইটি আপনাকে শব্দ প্রয়োগের ম্যানেজমেন্ট শেখাবে Right time, Right place, Right person এর মত।
৭। Mentor's Guide থেকে পড়বেন Grammatical Review, Analytical Ability, Analogy, Sentence Correction, Fill in the blanks ।
৮। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স থেকে শুধু সাম্প্রতিক হিসেবে যে ৫০টার মত এমসিকিউ দেয়া থাকে সেগুলো এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্রড টপিকগুলো যা রিটেন পার্টের সাথে সম্পর্কিত।
৯। Pearson থেকে কয়েক বছরের প্রশ্নের সাথে মিল থাকা অংশগুলো একেবারে ঝেড়ে ফেলবেন।
১১। Bank Written Math বইটি নতুন। অল্প ম্যাথ কিন্তু কার্যকরী।
১২। শীকর থেকে ব্যাকরণসহ সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বানান, বাগধারা, লেখক ও সাহিত্যকর্ম, ছদ্মনাম ইত্যাদি।
১৩। Dot com বইটি শেষ না করে হলে যাবেন না। কেননা, এখান থেকে প্রিলির জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাথ, কম্পিউটার এবং ইংরেজি হুবহু পরীক্ষায় আসে। প্রমাণিত সত্য।নিলক্ষেতেই পাবেন। Md. Mohshin এর নাম মুছে দিয়ে নিজেদের নামে চালাচ্ছে। এক্সট্রা-অর্ডিনারি জিনিয়াস!!!
এখন আর কষ্ট করে কেউ প্রশ্ন বানাতে চায় না। এখান থেকে, ওখান থেকে ‘মেরে’ দেয়।প্রশ্ন তাই উপরিউক্ত বইগুলোর মধ্যেই যাতায়াত করে।
এটা তো গেল আপনার প্রিলির ১০০ মার্কস।
#খ. রিটেন
২০০ মার্কসের রিটেন পার্টের মূল অংশ হচ্ছে, Math, Focus Writing এবং Translation। মূলত, প্রিলি ছিল আপনাকে ভবিষ্যতের ব্যাংকার হিসেবে রিটেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া। আপনার ভাইভায় ডাক এবং চাকরি পাওয়ার সম্ভাব্যতা নিশ্চিত করবে রিটেনে পাওয়া মার্কস। তাই বাসায়, হোস্টেলে, মেসে, বেলাদির ভালবাসা জড়ানো কোলে- মোটকথা, যেখানেই সুযোগ পাবেন-
১। Step by step ম্যাথ করবেন। আপনি শর্টে মারলে ওরাও শর্টে মারবে। ফলাফলঃ হাতের ফাঁক গলে চাকরিটা বেরিয়ে যাবে। আপনি হল থেকে বেরিয়ে এসে বিড়ি ফুঁকবেন। আর ইশ্ ইশ্ করবেন। বিধাতার হিসাব বড়ই বেমানান(!) বলে চুল(শর্ত প্রযোজ্য) ছিঁড়বেন। বেলাদির ফোনে ডায়াল টোন পাবেন না।
২। Focus Writing এর ক্ষেত্রে ঝুলি ঝেড়ে সব তথ্য দিয়ে আসবেন না। যেখানে যেটুকু দরকার সেটুকুই দিবেন। আপনি অর্থহীনভাবে লম্বা করবেন আর মার্কস দ্ব্যার্থহীনভাবে কমবে। ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক। Introduction, body ও Conclusion- এই প্যাটার্নে বমি করে দিয়ে আসুন। ভুল করেও বানান ভুল করবেন না। যারা খাতা দেখবেন তাদের অত সময় নেই পুরো খাতা পড়ার আর আপনিও অত লেখার সময় পাবেন না। তাই ‘বাসর রাতে বিড়াল মারা’র মত Introduction-এই হাই-পাওয়ার্ড চশমা পরিহিত স্যারকে ঘায়েল করে দিতে হবে। আপনার স্টার্টিং, শব্দ-চয়ন, গ্রামাটিক্যাল ব্যালান্স, লজিক্যাল সিকোয়েন্স অব আইডিয়া ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি দিয়ে আপনার মেধাকেই ‘সেল’ করতে হবে পরীক্ষকের কাছে। যদি তা না পারেন, আপনার চাকরির সম্ভাবনা হবে ‘হি ওয়েন্ট তো ওয়েন্ট, এমনই ওয়েন্ট, আর ডিডনট কাম ব্যাক(সে গেল তো গেল, এমনই গেল, আর ফিরে এলো না)’ এর মত। ঠিক যেন অগস্ত্য মুণির প্রস্থান।
৩। Translation এর ক্ষেত্রে, আক্ষরিক না করে ভাবানুবাদ করুন। দাদাভাই, রেগুলার কিছু না কিছু ট্রাই করেন। তা না হলে, সত্যি বলছি, আপনার ডিগ্রি আপনাকে বাঁচাতে পারবে না।
সবথেকে যা প্রয়োজনীয়, তা হচ্ছে, আপনার সীমাবদ্ধতা আপনিই ভাল জানেন। আমি যতই ‘কা, কা’ করি – কাজ হবে না। দেশ এখনও সবটুকু নষ্টদের দখলে চলে যায়নি। আপনার সবথেকে বড় শত্রু আপনার চারপাশে থাকা নেগেটিভ ক্যারেক্টারগুলো। মাথা থেকে Negative সব চিন্তাকে ‘Good Bye' বলে ঝেড়ে ফেলুন। হাসিমুখে Preparation নিন। কৃষ্ণপক্ষের ঘণ কালো রাত্রির মত মুখটাকে অন্ধকার না করে আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘরের দিকে একবার চোখ মেলে তাকান। নাম না জানা হাজারো দিনের কষ্টকর অনুভূতি, না পাওয়ার পুঞ্জীভূত যন্ত্রণাকে বুকের একপাশে আগাছার মত বাড়তে না দিয়ে শক্তিতে রূপান্তর করুন। দেখবেন মস্তিস্কের নিউরন সেলগুলো উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছে; সমতল ভূমিতে থাকা আপনাকে তুলে ধরেছে একটু উঁচুতে, যেখানে আপনার লালিত স্বপ্নের অবাধ চলাচল। গতিহীন স্তব্ধ দুপুরে রংচটা টি-শার্ট ভিজিয়ে দেয়া ঘামের গন্ধই আপনাকে করে তুলবে কুরুক্ষেত্রের যুধিষ্ঠির; লক্ষ্যে অবিচল অর্জুন। বেলাদির ব্যাংকার হাজব্যান্ড।
১৬৬৩টি Appointment Letter শুভ্রখামে অপেক্ষা করে আছে তার সঠিক ঠিকানার জন্য। এর মধ্যে একটা যে আপনার নয়, তা কে জানে!
বেলা, তোমার পিতৃদেবকে তো আমি চিনি। আমি নিশ্চিত ভদ্রলোক এই চিঠি খুলে পড়বেন। এই লেখা তোমার কাছে পৌছবার আগে যদি ওই সনাতন কামলার সাথে দেখা হয়, ওকে দিয়েও পড়াবে। দুইটাতে একসাথে বিড়ি খায়। চিঠিটা শুকে দেখ। যদি চিঠিতে বিড়ির গন্ধ পাও, নিশ্চিত যেন তোমার পিতা শুভকর্মটি সযত্নে সম্পাদন করেছেন।’
নিজের নামে এরকম লেখা দেখে একটু থিতিয়ে গেলাম। কাকাবাবুর কাছ থেকে বিদায় নিলাম। তারপর, একটা ভাল মত শিক্ষা দেয়ার জন্য ঠিক করলাম, যে পরামর্শ অঞ্জন দা’কে দিয়েছিলাম, তা চাকরির প্রস্তুতি গ্রহণকারী লক্ষ লক্ষ বেকারের সাথে শেয়ার করে নেব।
দিলাম শেয়ার করে তাদের জন্য যারা এ লাইনে নতুন। কাজে লাগলে সনাতন দা’কে এক কাপ চা খাইয়ে যাবেন কিন্তু।
[বিঃদ্রঃ যারা নেগেটিভ ক্যারেক্টারের লোক, শুচিবাইগ্রস্ত তারা সযত্নে এড়িয়ে যাবেন। এ লেখার এক কানাকড়ি মূল্যও আপনার কাছে নেই। তাই অযথা ফালতু কোন কমেন্ট করে রাইটারের ক্রিয়েটিভিটি নষ্ট করার মহান দায়িত্ব পালন করতে যাবেন না। কোন বিষয়ে দ্বিমত থাকলে তা ভদ্রভাবে শালীন ভাষায় প্রকাশের অনেক উপায় আছে। হয় সেভাবে বলবেন, না হলে চুপ করে থাকবেন।]
Comments
Post a Comment